নৈতিক শিক্ষামূলক গল্প
১. সত্যের জয়
রাহুল একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় একটি মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেল। ব্যাগ খুলে দেখে, ভেতরে অনেক টাকা এবং একটি পরিচয়পত্র। রাহুল একটু ভাবল, তারপর সোজা থানায় গিয়ে ব্যাগটি জমা দিল। পুলিশ পরিচয়পত্র দেখে মালিকের সাথে যোগাযোগ করে। মালিক এসে রাহুলকে অনেক ধন্যবাদ দিলেন। সবার সামনে রাহুলের সততার প্রশংসা করা হলো। রাহুল বুঝল, সত্য ও সততার পথেই জীবনের সত্যিকারের জয়।
২. পরিশ্রমের ফল
নীরা ক্লাসের পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল, কিন্তু শুরুতে তার নম্বর বেশি আসত না। বন্ধুরা কখনও কখনও তাকে হতাশ করত। কিন্তু নীরা হাল ছাড়ল না। প্রতিদিন সময়মতো পড়াশোনা করত, শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তর দিত। বছরের শেষে দেখা গেল নীরাই ক্লাসের প্রথম হয়েছে। নীরা শিখেছিল, "পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না।"
৩. বন্ধুত্বের মূল্য
আদি ও রুদ্র দুজন ভালো বন্ধু। একদিন খেলতে গিয়ে রুদ্র হঠাৎ পড়ে গিয়ে আহত হল। আদি তার খেলা বাদ দিয়ে রুদ্রকে বাড়ি পৌঁছে দিল, তারপর ডাক্তার ডাকল। রুদ্রের পরিবার আদিকে অনেক ধন্যবাদ দিল। আদি বুঝল, সত্যিকারের বন্ধুত্ব হলো বিপদে পাশে থাকা।
৪. সময় বাঁচানোর শিক্ষা
তৃষা সব কাজ শেষ মুহূর্তে করত। পরীক্ষার আগের দিন রাত জেগে পড়তে হত। একদিন তার শিক্ষক বললেন, "প্রতিদিন একটু একটু করে পড়লে চাপ থাকবে না।" তৃষা সেই পরামর্শ মানতে শুরু করল। পরীক্ষার সময় আর চাপ লাগল না, বরং ভালো ফলও করল। তৃষা শিখল — সময়ের সঠিক ব্যবহার জীবনে সফলতা আনে।
৫. সততার পুরস্কার
একদিন শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল রিফাত। হঠাৎ সে একটা মানিব্যাগ দেখতে পেল। ভেতরে ছিল টাকা আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। রিফাত লোভ না করে ঠিকানায় গিয়ে মালিককে মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিল। মালিক আনন্দে কেঁদে ফেললেন এবং বললেন, "তুমি আমাকে আজ শুধু মানিব্যাগ নয়, আমার বিশ্বাসও ফিরিয়ে দিয়েছো।"
🔹 নৈতিক শিক্ষা: সততা মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ।
৬. পরিশ্রমের মূল্য
মিতু আর তুহিন দুই বন্ধু। মিতু নিয়মিত পড়াশোনা করত, তুহিন সবসময় খেলায় মগ্ন থাকত। পরীক্ষার সময় দেখা গেল মিতু ভালো রেজাল্ট করল, আর তুহিন ব্যর্থ হলো। তুহিন বুঝতে পারল, আনন্দের পাশাপাশি পরিশ্রম করাও জরুরি।
🔹 নৈতিক শিক্ষা: পরিশ্রম ছাড়া সফলতা আসে না।
৭. ক্ষমার মহত্ত্ব
একদিন আরিয়ানকে এক বন্ধু ভুল করে ঠেলে ফেলে দিল। রাগে আরিয়ান মারতে যাচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ মনে হলো, ভুল তো সবাই করতে পারে। সে বন্ধুকে ক্ষমা করে দিল। পরে সেই বন্ধু জীবনের কঠিন সময়ে আরিয়ানকে বড় সাহায্য করেছিল।
🔹 নৈতিক শিক্ষা: ক্ষমা করা মানুষের চরিত্রকে মহান করে।
৮. সময় ব্যবহারের শিক্ষা
নেহা সারাবছর সময় নষ্ট করে শেষ মুহূর্তে পড়াশোনা শুরু করত। কিন্তু পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারত না। একদিন তার শিক্ষক বললেন, "সময় হলো সোনা, তাকে ঠিকমতো ব্যবহার কর।" নেহা এই কথা মনে রেখে নিয়মিত পড়াশোনা শুরু করল এবং পরবর্তী পরীক্ষায় দারুণ ফলাফল করল।
🔹 নৈতিক শিক্ষা: সময়ের সঠিক ব্যবহার জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি।
৯. স্বপ্ন ও চেষ্টা
রাফি ছোটবেলা থেকেই ডাক্তার হতে চেয়েছিল। কিন্তু তার পরিবারের অবস্থা ভালো ছিল না। সবাই বলেছিল, "তোর পক্ষে সম্ভব না।" কিন্তু রাফি বিশ্বাস হারায়নি। কঠোর পরিশ্রম করে সে একদিন সত্যিই ডাক্তার হলো।
🔹 নৈতিক শিক্ষা: নিজের স্বপ্নের ওপর বিশ্বাস রাখলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
১০. অহংকারের পরিণতি
সুমন সবসময় ভাবত সে সবার থেকে ভালো। একদিন স্কুলে একটি প্রতিযোগিতায় সে খুব সহজ প্রশ্নে ভুল করল, আর একদম চুপচাপ থাকা রাহুল প্রথম হলো। তখন সুমন বুঝল, অহংকার মানুষকে অন্ধ করে দেয়।
🔹 নৈতিক শিক্ষা: অহংকার পতনের মূল।
১১. সহানুভূতির শক্তি
একদিন রাস্তায় ভিক্ষুক এক বৃদ্ধ কাঁপছিল ঠান্ডায়। মেয়ে মুনা নিজের চাদর খুলে তার গায়ে দিয়ে দিল। বৃদ্ধের চোখ ভরে উঠল আনন্দে। সেই মুহূর্তে মুনা বুঝতে পারল, ছোট্ট সাহায্যও কারো জীবনে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
🔹 নৈতিক শিক্ষা: দয়া এবং সহানুভূতি মানুষের সত্যিকারের শক্তি।
১২. সৎ পরামর্শ
রিয়াজ তার বন্ধুকে ভুল পথে টেনে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তানিম সাহস করে বলল, "না, আমি ভুল কাজ করব না। তুমি চাইলে সঠিক পথে আমার সাথে আসো।" বন্ধুও শেষ পর্যন্ত ভুল কাজ থেকে ফিরে আসে।
🔹 নৈতিক শিক্ষা: অন্যকে সৎ পথে চলার পরামর্শ দেওয়া উচিত।
১৩. ধৈর্যের পুরস্কার
সোহান সব কাজে খুব তাড়াহুড়ো করত, ফলে ভুল হতই। তার শিক্ষক বললেন, "যে ধৈর্য ধরে কাজ করে, সাফল্য তার হাতের মুঠোয় আসে।" এরপর থেকে সোহান ধীরে ধীরে মনোযোগ দিয়ে কাজ করল, এবং সে সফল হলো।
🔹 নৈতিক শিক্ষা: ধৈর্য ও মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সাফল্য নিশ্চিত।
১৪. পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব
স্কুলের বাগানে অনেক ময়লা পড়ে ছিল। রিমা আর তার বন্ধুরা মিলে পরিষ্কার করে দিল। শিক্ষক সবাইকে ডাকলেন আর বললেন, "যে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে, তার মনও পরিচ্ছন্ন হয়।"
🔹 নৈতিক শিক্ষা: পরিচ্ছন্নতা শুধু শরীর নয়, মনকেও সুন্দর করে।
পর্ব ২
গল্প: সত্যের পুরস্কার
একটি ছোট গ্রামে থাকত রায়হান নামের এক ছাত্র। সে খুব গরিব, কিন্তু অত্যন্ত সৎ ও পরিশ্রমী। স্কুলে সে সবসময় নিয়ম মেনে চলত এবং মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করত।
একদিন সে স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তার ধারে একটি মানিব্যাগ পেল। ব্যাগ খুলে দেখে ভিতরে অনেক টাকা ও কিছু কাগজপত্র আছে। অনেকেই হয়তো সেই টাকা নিয়ে নিত, কিন্তু রায়হান জানে এটা ঠিক নয়।
সে সাথে সাথেই মানিব্যাগটি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে যায় এবং বলে, “আমি এটি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি। যাঁর হারিয়েছে, তিনি নিশ্চয়ই খুব চিন্তায় আছেন।”
চেয়ারম্যান সাহেব ব্যাগের ভিতরের ঠিকানা দেখে মালিককে খবর দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই এক বৃদ্ধ লোক এসে বলেন, “এটা আমার ব্যাগ! আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম। তুমি যে এটা ফিরিয়ে দিলে, তাতে আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।”
তিনি রায়হানকে কিছু টাকা পুরস্কার দিতে চাইলেন। কিন্তু রায়হান বিনয়ের সাথে বলে, “আমি পুরস্কারের জন্য এটা করিনি। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করেছি।”
চেয়ারম্যান ও উপস্থিত সবাই রায়হানের সততায় মুগ্ধ হলেন এবং তার স্কুলে একটি পুরস্কার দেওয়া হয় ‘সত্যবাদিতা ও সততার উদাহরণ’ হিসেবে।
নৈতিক শিক্ষা:
সত্য ও সততার পথে চললে হয়তো তাৎক্ষণিক পুরস্কার নাও মিলতে পারে, কিন্তু সমাজে সম্মান ও নিজের আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। এই গুণগুলি একজন মানুষকে মহান করে তোলে।
গল্প: মূর্খ যখন বিত্তবান হয়
একদা একটি ইঁদুর খাবার খুঁজতে খুঁজতে রাজার ঘরে প্রবেশ করে। কোনো খাবার না পেয়ে, সে একটি হীরার টুকরো গিলে ফেলল। হীরার টুকরো চুরি হওয়ার কারণে রাজপ্রাসাদে সবার ঘুম হারাম হয়ে গেল!
রাজা মশাই জ্যোতিষীকে ডাকলেন। জ্যোতিষী বললেন, “হীরার টুকরো ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে।
সেনাপতি রাজার হীরা উদ্ধারের জন্য রাজ্যময় পুরস্কার ঘোষণা করলেন। একজন শিকারীকে ইঁদুর মেরে হীরা উদ্ধারের দায়িত্ব দেওয়া হলো
শিকারী ইঁদুরটি ধরে ফেলল এবং তার পেট চিরে হীরার টুকরো উদ্ধার করল। রাজা খুশি হয়ে শিকারীকে পুরস্কৃত করলেন।
নৈতিক শিক্ষা:
লোভ ও মূর্খতা একসাথে থাকলে বিপদ ডেকে আনে।
গল্প: গরীব ছেলেটির সততা
একটি ছোট শহরে থাকতো রাকিব নামের এক গরীব ছেলে। সে প্রতিদিন সকালে পত্রিকা বিলি করত এবং বিকেলে স্কুলে যেত। একদিন পত্রিকা বিলি করতে গিয়ে সে রাস্তায় একটি পোর্টফোলিও কুড়িয়ে পায়। খুলে দেখে তাতে অনেক টাকা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আছে।
রাকিব ভেবেছিল, এই টাকা দিয়ে সে তার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারত। কিন্তু তার মা তাকে সততার শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাই সে পোর্টফোলিওটি নিয়ে স্থানীয় থানায় যায় এবং জমা দেয়।
কিছুক্ষণ পর একজন ভদ্রলোক থানায় এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমার জীবনের সঞ্চয় আমি হারিয়েছি।” তখন পুলিশ রাকিবের খোঁজে থাকা ব্যাগটি দেখায়। ব্যাগ ও কাগজপত্র দেখে লোকটি আবেগে কেঁদে ফেলেন।
লোকটি ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাকিবকে পড়াশোনার জন্য একটি বৃত্তি দেন এবং তার মায়ের চিকিৎসারও দায়িত্ব নেন।
নৈতিক শিক্ষা:
সততা সবসময় সঠিক পথ দেখায়, আর সৎ মানুষ কখনও একা থাকে না।
গল্প: সত্যবাদী ছেলে ও গাছের উপহার
তাহসিন ছিল এক গ্রামের সত্যবাদী ও দয়ালু ছেলে। এক গরমের দিনে সে মাঠে খেলতে গিয়ে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সে একটি পুরনো আমগাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল।
হঠাৎ গাছটি কথা বলা শুরু করল! গাছ বলল, “তুমি খুব ভালো ছেলে, আমি তোমাকে একটা উপহার দিতে চাই।” গাছটি তাকে বলল, সে যেন প্রতিদিন অন্যদের সাহায্য করে এবং কখনও মিথ্যা না বলে।
তাহসিন গাছের কথা অনুসারে চলতে লাগল। বছর শেষে গাছটি তাকে একটি ঝুড়ি ভর্তি আম উপহার দিলো, যেগুলো ছিল সোনালী রঙের। সেই আম বিক্রি করে তাহসিন তার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারল।
নৈতিক শিক্ষা:
সত্যবাদিতা ও সহানুভূতির ফল কখনোই ব্যর্থ হয় না।
গল্প: তিন বন্ধুর পরীক্ষার দিন
তিন বন্ধু – রিজভী, মমিন ও শাওন – একসাথে পড়াশোনা করত। একদিন তারা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষার আগে ঠিক করল যে তারা রাতে জেগে পড়বে। কিন্তু রিজভী ঠিক মতো প্রস্তুতি নেয়নি।
পরদিন রিজভী বলল, সে অসুস্থ ছিল এবং কিছুই পড়তে পারেনি। সে বলল, “চলো আমরা মিথ্যা বলি যে আমাদের গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তাই পরীক্ষা দিতে পারিনি।”
মমিন ও শাওন প্রথমে রাজি হয় না, কিন্তু শেষে সম্মত হয়।
পরদিন শিক্ষক তাদের আরেকটি পরীক্ষা নিতে বললেন, কিন্তু সবাইকে ভিন্ন কক্ষে বসিয়ে দিলেন। প্রশ্ন ছিল – “গাড়ির কোন চাকা নষ্ট হয়েছিল?”
তিনজনই ভিন্ন ভিন্ন উত্তর দেয় এবং ধরা পড়ে যায়।
নৈতিক শিক্ষা:
মিথ্যার পথ সাময়িকভাবে সুবিধা দিলেও শেষ পর্যন্ত বিপদ ডেকে আনে।